অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.
শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০
দূর্গা_বেচাকেনা
মৌসুমী রায়
========================================================================================
গাঁয়ের মেয়ে দূর্গার বিয়ে হয় রতনের সাথে, কলকাতায় ট্যাক্সি চালায় পাত্র। দূর্গারা পাঁঁচবোন, দূর্গাই বড়। তাই হারানকাকু পাত্র হাতছাড়া হওয়ার আগেই বিয়েটা দিয়ে দেয়। ভালো করে খোঁজ খবর নেয়না পাত্রের কোন। রতন বিয়ের পর দমদমে এক বস্তির ঘরে এসে ওঠে। দুদিনেই দূর্গা নিজের গুণেই রঙচটা ঘরটাকে সংসার বানিয়ে ফেলে। বেশ সুখেই কেটে গেলো দুটো তিনটে মাস। রতনের এক বদ স্বভাব সে মাঝে মধ্যেই মদ খায়, তবে গোলমাল করেনা চুপচাপ এসে ঘুমিয়ে পড়ে। দূর্গা মানা করেছে কিন্তু রতনের বক্তব্য ট্যাক্সি চালিয়ে বড্ড গায়ে ব্যথা হয় তাই অল্প খায়। দেখতে দেখতে শরত কাল এসে গেলো দূর্গার বস্তির সামনে একটা দুর্গাপূজার প্যান্ডেল শুরু হয়ে যায়।
একদিন সন্ধ্যায় রতন বলে চল তোমায় একটা নতুন শাড়ি কিনে দিই। দুজনে বের হয় ট্যাক্সি নিয়েই রতন বারাসাতের দিকে যায়, দূর্গার প্রশ্ন করে তাকে আমরা কোথায় যাচ্ছি? রতন উত্তরে বলে আমার এক বন্ধুর বাসায় যাব তারপর শাড়ি কিনে খেয়ে ফিরব। যেখানে এসে রতনের ট্যাক্সিটা থামে সেটা বেশ অন্ধকার গ্রাম্য পরিবেশের মাঝে একটাই একতলা পাকাবাড়ি আসেপাশে আর কোন ঘরবাড়ি নেই। ওরা দুজন নেমে বাড়িতে যায়, ভিতরে আরো চার-পাঁচজন লোক বসে ছিলো। দূর্গার বেশ অস্বস্তি হয় সে রতনকে বলে এ কোথায় একাল কোন মেয়ে তো নাই এখানে। রতন বলে তুমি বস আমি বন্ধুর বউকে নিয়ে আসি বৌদি বাজারে গেছে। আপত্তি জানায় দূর্গা একা থাকতে, কিন্তু রতন ধাক্কা দিয়ে তাকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। তারপর যা হওয়ার দূর্গাকে পাঁচটা অসুরে ছিঁড়ে খায়। তার বুকফাটা আর্তনাদে কেউ সারা দেয়নি এমনকি বাইরে বসে থাকা তার স্বামীও না। সে তখন কড়কড়ে কিছু টাকা গুনে নিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যায়।
পরেরদিন পাশের ঘরের মাসি দূর্গার কথা জানতে চাইলে বলে তাকে বাপের বাড়ি রেখে এসেছে পুজোর পর আনবে।
দূর্গা মায়ের আগমন হয়, আর রক্তাক্ত দূর্গা কোন রকমে ফিরে যায় বাপের ঘরে। কিন্তু পোকায় কাটা ফুল যে মায়ের পুজোয় লাগেনা, তাই রাতের অন্ধকারেই দূর্গার বাবা তাড়িয়ে দেয় মেয়েকে। তার আরো চার মেয়ের বিয়ে দিতে হবে লোকজানাজানি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কোথায় যাবে দূর্গা এবার? যার হাতে বাবা তুলে নিজেকে বোঝামুক্ত করেছিলো সে তো আরো পাষন্ড।
রতনের পাড়ার ঠাকুর ধুমধাম করে বিসর্জন যায় অনেক আলো ব্যান্ড বাজা সহ। গঙ্গায় মায়ের বিসর্জন হয়ে গেলে, পাড়ার একটা ছেলে হইহই করে চিৎকার করে ওঠে। সবাই ছুটে আসে ঘাটে আবার। সে জলের দিকে হাত দেখায় সবাই দেখে মা দূর্গার মূর্তির নিচে একটা মেয়ের মুখ দেখা যাচ্ছে। তারা সবাই মিলে দেহটা তুলে আনে। অবাক হয়ে দেখে রতনের বউ দূর্গা!
তারা থানায় খবর দেয়, কিন্তু রতন ততক্ষনে অন্য জায়গায় পাড়ি দিয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দূর্গার বাবা যদি সেদিন অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দিতো সমাজের ভয় না পেয়ে। আজ তবে দেবী দূর্গার সাথে মাটির দূর্গার বিসর্জন হতনা।
আমরা কবে মিথ্যা দেবী পুজো বন্ধ করব যেখানে আমাদের ঘরের মেয়েরাই সুরক্ষিত নয়?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন