অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

একটু অন্যরকম


ব্ৰততী রায়
========================================================================================


নীতি ছোটো থেকেই জেহাদি,প্ৰতিবাদী,লড়াকু স্বভাবের।সমবয়সীরা তো বটেই বয়স্করাও বেশ সমঝে চলে।

ওই একরত্তি মেয়ের সমাজের প্ৰতি কী ঘৃণা। আর হবে নাই বা কেন দাদাকে নিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যায় সবাই এমন ভাবে তাকায় যেন কোনো আজব প্ৰাণী দেখছে।নীতির ভ্ৰু কুঁচকে যায়। কখনো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞ্যেস করে 'কী দেখছ? একে চেনো না? এ আমার দাদা অপু ,অপূর্ব।'



অপু মূক ও বধির। তবে পুরোপুরি নয়। পঞ্চাশ শতাংশ। শ্ৰবণ শক্তি দুর্বল হলেও আছে। কথা আর পাঁচজনের থেকে দেরীতে বেরোলেও বলে তবে খুব স্পষ্ট নয়।ধ্ব

ধৈর্য নিয়ে শুনলে বোঝা যায়। তাই দেরীতে হলেও স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ক্ৰমশ প্ৰবেশ করছে। সামাজিক করুণা বা বিদ্ৰুপ নয় সুস্থ স্বাভাবিক আর পাঁচটা শিশুর মতোই ওরও বিকাশ হোক , এটাই ওর পরিবারের একান্ত লক্ষ্য। প্ৰথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ ধীরে হলেও রপত করেছে। ওই যে বললাম একটু বিলম্বিত। নীতি আর মেধা দু বোন স্থানীয় মিশনারি স্কুলে পড়ে। এবার অপুকে স্কুলে ভর্তি করার পালা।যদিও একটু বেশি বয়সেই। তবু অপুর বাবা নিখিলেশ বাবুকে অনেক প্ৰতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই অপুকে সর্বজনীন স্কুলে ভর্তি করতে সক্ষম হন। নীতির খুশি দেখে কে। প্ৰথমেই বলেছি নীতি একটু ডাকাবুকো,প্ৰতিবাদী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অত ছোট থেকেই লড়ে যায়।বয়েস হব বছৱ দশেক। ছোটো থেকেই খুব জেদী আর রাগী। যেখানে যত অন্যায় গণ্ডগোল সেখানেই নীতি কখনো হাতাহাতি,কখনো মারামারি করে হাত পায়ে চোট লাগিয় বাড়ি ফিরে আগে মায়ের মার তারপর বাবার শুশ্ৰুষা পায়। তাতে ওর কিছু বদল হয় না।

একটা ঘটনা তবে বলি। নীতিকে সবাই সমঝে চলে আগেই বলেছি। ওরা তিন ভাই বোশ মিলে রথের দিন রথ নিয়ে বেড়িয়েছে। অপু কাঁসর ঘণ্টা বাজাচ্ছে। ওরা পাড়ার ভেতরেই রথ টানতে টানতে অনেকে আরো কচি কাচা জুড়ে গেল। এমন সময় পচা পিছন থেকে অপুকে বলে উঠলো ' দেখ দেখ হাবা কাঁসর বাজাচ্ছে' ব্যাস যেই না শোনা অপুৱ হাত থেকে লাঠিটা নিয়ে নীতি ঝাঁপিয়ে পড়ল পচার ওপর।' কি বললি ,আবাৱ বল,বল একবাৱ বল। হাবা হাবা!' বলেই লাঠি টা নিয়ে এলোপাথারি মেরেই চলেছে। চোখ রাগে ফেটে পড়ছে। যেন খুদে চণ্ডী। ফোঁস ফোঁস করছে রাগে। অপু আর মেধা হকচকিয়ে দেখছে।নীতি কীই করছে।অপুতো নীতিকে থামাতে মরিয়া। ওতো কিছু বুঝতে পারছে না।এদিকে মেধা ছুটেছে বাবাকে ডাকতে।নীতিকে থামানো যাচ্ছে না। পাড়াৱ সবাই ততক্ষণে জড়ো হয়ে গেছে। নীতি তখনো পচাকে রাস্তায় ফেলে কিল চড় লাঠি মেরে চলেছে।কি রুদ্ৰ তার মূর্তি।দরদর করে ঘামছে।' বল আর কোনোদিন বলবি বল?'পচাতো কাঁদতে কাঁদতে বলেই চলেছে' আর কোনোদিন বলবো না। এবাৱ ছেড়ে দে। না হলে যে মরে যাবো রে। এবারের মতো মাফ করে দে। এবার থাম । তোর দুটো পায়ে পড়ি।'ততক্ষণে নিখিলেশবাবু এসে পড়েছেন। নীতিকে যখন সবাই থামালো তখন সে বাঘের মতো গর্জন করছে। ওকে যেন দেবী চণ্ডী ভর করেছে। নারী শক্তি ওই খুদে শরীরে গর্জে উঠেছে। যেন দশ হাতে ওর অসুর দলনী সংহার মূর্তি। ওইটুকু মেয়ে কী তেজ।সবাই দেখে অবাক। নীতি ছুটে বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। ' বল কেন দাদাকে অমনি বলবে।বল বল?' বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করছে মেয়েকে।

নীতির হাত থেকে ছাড়া পেয়ে পচা দে ছুট।

তারপর থেকে পচা খুব সমীহ করে চলতো। রোজ স্কুলে যাবার সময় অপুকে ডেকে বডিগার্ডের মতো আগলে নিয়ে যেত। আজ পচার আমূল পরিবর্তন। অপু সাদা মনে পচাকে টিফিন থেকে খাবার খাওয়াতো।সব সময়ে অপুকে আগলে রাখতো।আর রোজ নিখিলেশবাবুর কাছে টিউশন পড়তে যেত। নীতি একটা অন্তত একটা বখে যাওয়া ছেলেকে তো শুধরাতে পেরেছে ওইটুকু বয়সে। সেদিন থেকে অপু আর পচা অভিন্ন হৃদয় বন্ধুত্বে বাঁধা পড়ল। সবই নীতিরই কৃতিত্ব। আজো সে অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন