অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

যুগে যুগে ত্যাগে নারী



 

সিলভিয়া ঘোষ
==================================================================================


রাহলের জন্মের পরদিন সকালে যশোধরা যখন জানতে পারলেন যুবরাজ সিদ্ধার্থ সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হতে চলেছেন ঠিক সেই সময় থেকেই যশোধরাও রাজকীয় বসন ছেড়ে গেরুয়া বসনে অবতীর্ণ হয়ে একবেলা অন্ন জল গ্রহণ করে সন্ন্যাসিনী র মতোন জীবন কাটাতে শুরু করেন। এই ত্যাগের কাহিনী তো যুগে যুগে আমরা শুনে আসছি। তেমন শুনেছি বিষ্ণুপ্রিয়াও দীর্ঘ দিন বেঁচেছিলেন, স্বামী চৈতন্যদেবের ফিরে আসার আশায়। ত্যাগের কাহীনিতে নারীরা অভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী।



এ কাহিনীর প্রেক্ষাপট অবশ্য ভারতের বাইরে বিলেতের মাটিতে। অত্যন্ত কষ্টের সংসার তার। কোলে দুধের শিশু আর সাথে বৃদ্ধা মা। যার সামান্য পেনশন আর নিজে কেরানী গিরি করে মাসে মাত্র দু শো শিলিং দিয়ে সংসার চালান কোন রকমে। স্বামী আছেন। তবুও স্বামীর সাথে তার আর দেখা হবে কি না সেটা জানেন না । সেই কবে একবার এসেছিলেন তিনি। স্বামীর ছোঁয়া গুলোও কি ভুলে যাচ্ছেন তিনি! না ভুলতে তিনি চান না, বারবার মনে করে রাখেন কবে কবে তিনি তাঁর কণ্ঠ, চিবুক, ওষ্ঠ, ওধর স্পর্শ করেছিলেন। এই তো সেদিনই চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে। হয়তো আর দেখা হবে না কখনও, সে ইঙ্গিত তো দিয়েছেন। তবুও প্রতি চিঠিতে লেখা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অমূল্য ভালোবাসা যা এক হৃদয় থেকে আরেক হৃদয়ে বয়ে চলেছে সর্বদা যেখানে সংস্কৃত মন্ত্র কিম্বা বাইবেলের মন্ত্র এক হয়ে যায় : যদিদং হৃদয়ং তব / তদস্তু হৃদয়ং মম। এই কারণেই তো মেয়ের নাম অমিতা (লোকচক্ষুর আড়ালে) দিয়েছেন বাবা সুভাষ। আর মা ত্যাগী নারী যাঁর কাছে স্বামীর ভালোবাসা মানে ১৬৫টি চিঠি আর আত্মজা অনিতা ব্রিগেতি । কিছুই চাননি তিনি স্বামী ও তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে । শুধুমাত্র মেয়ের স্বীকৃতিটুকু ছাড়া। স্বামীর ফিরে আসার আশায় আশায় দিন গুণতে গুণতে ১৯৯৬ তে মারা যান ত্যাগী, তপস্যী নারী নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের স্ত্রী, এমিলি শেঙ্কেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন