==================================================================================
একজন দেবাংশী আর একজন দামিনি। দুই নেপালী কন্যে। কার্শিয়াং থেকে দশ মাইল ভিতরে পাহাড়ের ঢালে ইতি-উতি ঝুপড়ি বানিয়ে গড়ে ওঠা নেপালী মানুষের গ্রামে বাস তাদের। তাশি শেরপা, গাঁয়ের তাগড়াই যুবক, কার্শিয়াং এ গাড়ি চালায়। ইদানিং দেবাংশীর থেকেও তাশির নজর কাড়ছে দামিনি। চুলে ফুল গুঁজে তাশির গাড়িতে পাশের সিটে বসে কার্শিয়াং ঘুরে এসেছে। খবরটা দেবাংশীর কানে যাওয়া ইস্তক রাগে ফুঁসছে সে।
গতরাতের হড়পা বানে ভেসে গেছে তিন-চারটে ঝুপড়ি। ঘুমন্ত তাশি, দামিনি আর তাদের ছ'মাসের শিশুকন্যাটিও। কার্শিয়াং থেকে উদ্ধারকারী দল কবে আসবে ঠিক নেই, রাস্তায় জায়গায় জায়গায় ধস নেমেছে। কয়েকশো ফুট নীচে খাদের মধ্যে পড়ে থাকবে মৃতদেহগুলো।
দেবাংশীর বেতের মতো মেদ হীন শরীরটা কাদা, পাথর বেয়ে, কখনও ঝুলন্ত লতা ধরে ঝুলে নেমে যাচ্ছে খাদে। সে জানে না এত কষ্ট সহ্য করে কেন এ অবতরণ। আরও, আরও অনেক নীচে নামছে দেবাংশী। শরীর ছিঁড়ে রক্ত বইছে, কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শুধু নামা আর নামা।
ঐ তো আলিয়া মাসি, বিনাল বৌদি, গগনেশ ভাই, গিরীষ কাকা। উপুড় হয়ে পড়ে আছে, হ্যাঁ হ্যাঁ, পেশীবহুল, ওটাই তো তাশি, দেবাংশীর, না না দামিনির তাশি--তাশি শেরপা। ঝোপের মধ্যে কিছু একটা, হ্যাঁ, মৃত দামিনির উলঙ্গ বুকের ওপর নড়ছে কিছু! খেলা করছে ছ'মাসের শিশুকন্যা!
বুকে তুলে নিল দেবাংশী। প্রাণ আছে। পালাবে দেবাংশী। দেবাংশী এখন মা। যে দামিনি তার তাশিকে কেড়ে নিয়েছে, সেই তাশি-দামিনির সন্তানের মা। পাহাড়ি পথ বেয়ে ঘুর পথে সিকিমে পৌঁছতে হবে, নয়ত ওরা কেড়ে নেবে ওর সন্তানকে। পাথুরে, দুর্গম অজানা পথে সন্তানকে বুকে চেপে একটা একটা পা ফেলে চড়াই ভাঙছে মহীয়সী এক মা, আজ পৃথিবীর কোন শক্তি তার সন্তানকে কেড়ে নিতে পারবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন