অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

একটি অণুগল্পে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

  

=========
বোঝা
=========


কাল থেকে মাথাটা ভারী হয়ে আছে।গা-গরম কেমন উত্তেজিত লাগছে সবসময়। দুলালের কাছে কথাটা শুনেই তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।সে অফিস বেরিয়ে গেলে মিত্রা না-কি ওদের পাশের পাড়ার একটা বাড়িতে যায়। কার কাছে যায়? নিশ্চয় পুরোনো প্রেমিক।সে ঘুণাক্ষরেও জানে না।
আজ এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে।প্ল্যান হয়ে গেছে।নির্দিষ্ট সময়ে অফিস যাবার নাম করে বেরিয়ে গেল প্রকাশ।
বলে গেল, আমার ফিরতে দেরি হবে।অনেক কাজ বাকি আছে।
ঘাড় নেড়ে সমর্থন করে মিত্রা।
শহরের ওই দিকটা তার চেনা নয়। দুলালের পাড়া পার হয়ে একটা নিরিবিলি চায়ের দোকানে অপেক্ষা করে সে।দুকাপ চায়ের ফাঁকে কাগজ ওলটাতে শুরু করতেই এসে পড়ে মিত্রা।নিশ্চিন্তে এগিয়ে যাচ্ছে।আশ্চর্যের বিষয় মুখে একটুও পাপবোধ নেই,ভয়ও নেই।দারুণ অভিনেত্রী যে!
আস্তে আস্তে সেও এগিয়ে যায়।বাড়িটা সাবেকি একতলা,প্রাচীর ঘেরা।গেট খুলে নির্দ্বিধায় ভেতরে ঢুকে গেল মিত্রা।সংকোচের লেশমাত্র নেই,এমন অন্ধ প্রেম!
চূড়ান্ত দৃশ্যের পর সে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথায় আসে না..... এসপার-ওসপার আজই হয়ে যাবে।ওর মিষ্টি কথার পেছনে এত বিষ! হৃৎপিণ্ড এত জোর ছুটছে মনে হয় এক্ষুনি ফেটে যাবে।
গেট খুলে সাবধানে ঢুকে পড়ে সে। কাউকে দেখা যাচ্ছে না।সেইপ্রান্তের ঘর থেকে মৃদু গলায় কারা কথা বলছে।সেই কি এই কুঞ্জের কৃষ্ণ?
শিকারি বিড়ালের মতো এগিয়ে যায় একজন নিয়ন্ত্রণহীন মানুষ।জানলায় উঁকি দিয়ে সে যা দেখলো তা প্রত্যাশিত নয়।ধপধপে সাদা চুলের এক অসুস্থ বৃদ্ধা বিছানায় বসে আর মায়ের মতো পরম যত্নে তার মুখে চামচ দিয়ে প্রকাশেরই ছোটো টিফিনকৌটো থেকে পরমান্ন তুলে দিচ্ছে মিত্রা।বৃদ্ধার চোখে স্বর্গীয় পুলক।
সন্ধ্যায় মিত্রার পাশে বসে বললো প্রকাশ,দ্যাখো,আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই,তোমারও তাই।মা জাতীয় একজন কেউ থাকলে ভালো হতো -- তাই না?
-- কিন্তু তুমি যে বলেছিলে,এই দুর্মূল্যের বাজারে বিয়ে করে কোনো বোঝা নিতে পারবে না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন