অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

শনিবার, ১২ জুন, ২০২১

দুইটি কবিতায় পরাগ

 

 

সাংস্কৃতিক
===============
পরাগ ভট্টাচার্য্য
===============



উনবিংশ শতকের ফুটন্ত দিনগুলো

বিংশ শতাব্দীর আশা নিরাশার দোলায়

বঙ্গদেশের শিক্ষিত নব্য বাঙালির মনে

জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন

পরাধীনতার গ্লানি বইছে শিরায় শিরায়,

মশাল জ্বলছে এখানে সেখানে

মনীষীদের পাদস্পর্শে ধন্য সেই দিনগুলো,

তাদের মাঝে ছিলেন দুজন প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব

সবার কাছে গুরুদেব, যদি ছিলেন জ্বালামুখী,

ধূমকেতু যেন উৎসারিত লাভা, রবি ঠাকুরের স্নেহধন্য

একজন যদি বটবৃক্ষ, যার শান্ত ছায়ায় অধ্যাত্ম

অন্যজন চন্দন গাছ, যার সুগন্ধে মাতাল ঘাসবন

একজন অভিজাত পরিবারের কোমল অন্তরে স্বপ্নে স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরতা, শিক্ষায় শ্রীনিকেতন

অন্যজন গরীবের সন্তান, রক্তিম তাঁর স্বপ্ন

রবীন্দ্র সঙ্গীতের হাফিজ, মেঘলা আকাশের বিজলী

একজনের জীবনের পাতায় পাতায় চোখের জলে ভেজা

যিনি ছিলেন শান্ত, পরিশীলিত, মহীরুহ সম

অন্যজনের জীবনের পাতায় পাতায় যুদ্ধ

দুর্দণ্ড, প্রচন্ড, দুর্দমনীয়, এক প্রানবন্ত শক্তি

একজনকে পেলাম দীর্ঘ সময় আর তাঁর সব অসামান্য সৃষ্টি

অনন্য সম্মান এনে দিলেন,নোবেল পুরস্কারে

অন্যজনের শক্তিশালী লেখা, সাহিত্য তাঁর কৃষ্টি।



দেশভাগের চেষ্টা বিফল করে দিয়ে

রাখীবন্ধনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠে সেতুবন্ধন

ধর্মের নামে বিভেদের ফণাকে ছিন্ন করে

দ্ব্যর্থহীন লিখেছিলেন 'হিন্দু না ওরা মুসলিম'

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের মুক্তি কল্পে

পুরুষ প্রধান সমাজে নারীজাতির উন্নতির লক্ষ্যে

তাঁদের কথা ও উপন্যাসে, গান ও কবিতার ধারায়

সমাজ সংস্কার, দিয়ে গেছেন সচেতনতার নিদর্শন,

জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংসতার প্রতিবাদে

ব্রিটিশদের বিরোধিতায় কেঁপে উঠেছিল মাটি

দেশপ্রেমের মন্ত্রে অনুরণন হৃদয়ে হৃদয়ে

ভারত ছাড়ো, 'কারার ওই লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল '

বিশ্বযুদ্ধের দামামা, মহামারীর ভয়াবহতা

মৃত্যুক্ষুধার সামনে লক্ষ মানুষ, অব্যক্ত বেদনা

লেখেন 'আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ'

এসব প্রতিকূলতার ঢেউ আছড়ে পরার সাথে

বিশ্বকবির লেখনীর মায়াজাল বিস্তৃত হয় বিশ্বময়

বিদ্রোহী কবির অভ্যুত্থানে ঘৃতাহুতি যুদ্ধাঙ্গনে

অগ্নিযুগের অগ্নিবীণায় বেজে ওঠে সেই সুর

সাম্যবাদের আদর্শে সর্বহারার কথায় মুষ্ঠিবদ্ধ

আন্দোলন বাঁধনহারা , কে বাঁধবে অবাধ্য তারে

অবশেষে এসেছিল স্বাধীনতা

কুহেলিকাময় রাত্রির শেষে মুকুট মাথায়, অরুণোদয়,



আজ কখনো মনে হয় ভুলে যাচ্ছি তাঁদের অবদান

মনের আনাচে কানাচে হয়তো ভাবছি, তারা অপ্রাসঙ্গিক

কখনো ভাবছি তাদের ছায়ায় আর নয়, বদলে গেছি,

যদি ভেবে থাকি, মনে হয় স্বাধীনতার পাতাটা খোলা দরকার

তাঁদের বলিদান, দেশমাতৃকার সকল সন্তানের মুক্তির স্বপ্ন

ধর্ম, বর্ন, জাতি নির্বিশেষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সঙ্কল্প

একবার ঝালিয়ে নেওয়া দরকার, তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের জয়

মনে হয় খুঁজে পাব বর্তমান আর ভবিষ্যতের পথ

কারও কাছে ধার করা নয়, তাঁদের আদর্শ খু্ঁজে দেবে ধ্রুবতারা,

অকুণ্ঠ হৃদয়ে করি প্রনাম এই দুই জ্যোতিষ্কের।

 


 

 



সভ্যতার সিঁড়ি বেয়ে
=======================
পরাগ ভট্টাচার্য্য
=======================


নদীটির তীরে গড়ে উঠেছিল সভ্যতা, আজ ইতিহাস

সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অনেকটা পথ চলে

দেখি নদীতীরের প্রানবন্ত শহরগুলো

প্রকৃতির সম্পদ আত্মসাতে, সেজেছে আলোর মালায় !

সাগরের তীরেও গড়ে উঠেছে অনেক শহর, দেশ

শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ অর্থ সম্পদে

জলপথে ব্যবসা, বানিজ্যে স্থাপিত স্বনির্ভরতা

কথায় আছে 'সপ্তডিঙ্গা মধুকর চলেছে বানিজ্যে'

ইউরোপ থেকে আমেরিকা

ইউরোপ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ

বাকি দেশগুলিতেও ধীরে ধীরে যোগাযোগের শিকল

এসেছিল পর্তুগিজ, ফরাসিরা, ঘাঁটি করেছিল

ইংরেজদের অধীনে ছিলাম অনেক বছর

কত রণতরী পাড়ি দিয়েছিল এই জলপথে!



কত কাহিনী, লোককথা ঢেউয়ের দোলার ছন্দে

মুখে মুখে লেখা হয়েছিল, নদীর আঁকেবাঁকে

লেখক, কবির কল্পনার জগতে যেন শব্দবৃষ্টি হয়ে

কখনো লিখেছেন

'হে পদ্মা আমার

তোমায় আমায় দেখা শত শত বার'৷

'আমাদের এই নদীর কূলে

নাই কো স্নানের ঘাট

ধু ধু করে মাঠ'

কখনও বা

'সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী'

চিরকাল নদীর সাথে জীবন টেনেছে সাহিত্য সঞ্চারে;



আজ নদীপথ নাব্যতা হারিয়ে, গুরুত্ব হারিয়েছে

কোথাও বুজে গেছে বা বদ্ধ জলাশয়,

গড়ে ওঠা কারখানা আর শহরের ফেলা জঞ্জালে

কোথাও বহমান ,কিন্তু শ্রী হারিয়ে ম্রীয়মান

তীরের শহরগুলির অকারন ব্যস্ততা

ক্লান্ত নদীর ধারাকে যেন পরিহাস করে!

চেষ্টা চলেছে নদীর রূপ ফেরানোর

যা অপ্রতুল, তুলনায় ক্ষয় অনেক বেশি,

উপকূল অঞ্চলে হয়ে চলেছে চরম ক্ষয়ক্ষতি

যে জলের ধারায় জনজাতির প্রাণ সঞ্চারিত

মানুষের খামখেয়ালিপনায়, আজ ওষ্ঠাগত

এই জলেই কতজনের আজও নির্ভরতা

ব-দ্বীপ অঞ্চলে জলেই জন্ম থেকে মৃত্যুর যাত্রাপথ

দ্বীপমালার মাঝেও এই জলেই করে অর্পণ

জলের মাঝেই তারা বেঁচে আছে, এতেই স্বাভাবিক

সেই জলধারা আজ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত!



মানুষের ক্ষমতা লিপ্সা, অমানবিক চিন্তা

আগ্রাসী মনোভাব, প্রকৃতিবিরোধী সমৃদ্ধি

যেন এক পরিকল্পিত নাশকতা!

প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজাতি, নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে

ধ্বংসের বিচিত্র উন্মাদনায় হারিয়ে ফেলছে অব্যাহতির পথ

বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সমাধিতে অতীত বর্তমান।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন