এক সমুদ্র ক্ষুধা
===============
বহ্নি শিখা
===============
সমুদ্রের প্রলয়োল্লাস। ভীষণ ভয় তরাসে কাঁপছে উপকূল উপদ্রুত এলাকা। জনজীবন। কক্সবাজার, আশে পাশের সমস্ত এলাকা। রৌমারী,সাতক্ষীরা কুড়িগ্রাম আশে পাশের সব তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে যাবতীয় অস্থাবর। গাছ গাছালি, ঘর গেরস্তি। সদ্যবিবাহিত মিষ্টি আর পলাশ। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে আর সবার মতো। মিষ্টির বাবা বলেছিলো পলাশকে, শহরে চলে এসো। নতুন করে ব্যবসা শুরু কর। যতোটা সম্ভব সাহায্য করবো। তাছাড়া মিষ্টি আমার একমাত্র মেয়ে। আমার ব্যবসাপাতি দু'দিন আগ পাছ তোমাকেই দেখতে হবে। রড সিমেন্টের দোকান ভাড়া হলেও ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারলে প্রচুর লাভ। ভেবে দেখো পলাশ। প্রতিবছর জলের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। পলাশ অনেক চেয়েছে। পলাশের বাবা মা রাজি হয়নি, সাতপুরুষের ভিটা ছেড়ে যেতে। পলাশকেও যেতে দেয়নি। তার মাছের ঘের চারটা। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম। পলাশ বি, এ পাস করে সে সবই দেখাশোনা করে। পাকা বাড়িঘর। নিম্ন চাপ দেখা দিয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দু'দিনেও অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। মধ্য রাতে প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেলো বাঁধ। অগণিত ঢেউয়ের তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো সব। কোনোমতে বেঁচে গেলো পলাশের জন্ম স্মারক মা বাবা আর তারা দু'জন। ভেসে গেছে খড়কুটোর মতো অগণিত গরু-ছাগল কুকুর বেড়াল,হাঁস মুরগী । উড়াল তারের সব যোগাযোগ বন্ধ। ত্রাণের ভরসায় সহস্র মানুষ। উদাস চোখে তাকিয়ে প্রহর গুনছে। ভাগবাটোয়ারা হয় ত্রাণ সামগ্রী। বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে হলেও কেউ পায়, কেউ পায় না। কালোহাতে উলোটপালোট হয়ে যায় সবকিছু। ধনী গরীব এককাতারে হাত বাড়ায় একমুঠো ভাতের জন্য। ভিড়ের চাপ সহ্য করার শক্তি হারিয়ে গেছে অনেকের। তবুও উঠে দাঁড়ায় জঠর যন্ত্রণা। আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর্থিক সচ্ছলতা কোন কাজেই আসে না। পলাশের মতো শতো শতো মানুষ এখন ভিখিরি। একগুঁয়ে পলাশের বাবা হঠাৎই নির্বাক। হারিয়ে ফেলেছে বাক্ শব্দ। পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই। পলাশের বুকফাটা কান্না ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে যায়। মা বাবা মিষ্টি শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। যে করে হোক বাঁচাতে হবে। নিজের শক্তিহীন দেহটাকে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় পলাশ। অনেক অপেক্ষার পর চারজনের খাবার নিয়ে আসে। ততক্ষণে মিষ্টি জ্ঞান হারিয়েছে। বোতলের শেষ জলটুকু নিংড়ে মিষ্টির নাকে মুখে ছিটিয়ে দিতেই মিষ্টি তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে বললো আর পারছি না। পলাশ বললো, এই দেখো খাবার এনেছি। এর মধ্যেই বাবার ক্ষুধার সমুদ্র গ্রাস করে নিয়েছে খাবারের বেশির ভাগই। বাক্ বোধহীন বাবার হাত টেনে ধরে রেখেছে মা। মা বলছে আর খেয়ো না। ওরা খাবে না? ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকে বাবা। মা কাঁদে। কাঁদতেই থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন