অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে অণুগল্পে রত্নদীপ চক্রবর্তী

 




অন্যমনে অণুগল্পে রত্নদীপ চক্রবর্তী
=========================

ভালোবাসা

বিপিনের কলেজ স্ট্রিটে কিছু কাজ ছিল, একটা ছোট বই প্রকাশনীর হয়ে আশপাশ এলাকায় সাইকেলে বই ডেলিভারি দিয়ে বেড়ায়, যার যেমন অর্ডার তেমন ডেলিভারি করে আসে। তবে আজ হঠাৎই তাড়াতাড়ি কাজ মিটে গেলো....

ভাবছিলো শিপ্রাকে একটা ফোন করবে কিনা, কিন্তু পরোক্ষনেই গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনে একটা কাজের কথা মনে পড়লো। অতএব ফোনে ডাকার প্ল্যান বাতিল করতে হলো; বিপিন বাগবাজারের নিবেদিতা লেনের একটা ছোট্ট দুই কামরার ঘরে থাকে। শিপ্রার সাথে আলাপ তা প্রায় পাঁচ বছর হলো ও থাকে কুমোরটুলি পার্কের কাছে, এক পুজোয় দুজনের দেবীদর্শন করতে গিয়ে পরস্পর পরস্পরকে চেনার পালা... সম্পর্কে ওদের জীবনে আলো-আঁধারির খেলা এলেও সম্পর্ক জলের মত বয়ে গিয়েছে...।

 

বিপিন ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে  সিআর এভিনিউয়ে এসে রাস্তা পেরিয়ে বাদিকের ফুটপাথের  ঘেঁষে অতি সন্তর্পনে সাইকেলে পা  লাগলো গিরিশ পার্কের দিকে...। যেতে যেতে চোখে পড়লো একটা পরিত্যক্ত রেস্টুরেন্ট, আর তার ধারেই বসে অল্পবয়সী দম্পতি, ও সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়ালো পাশেই। ওদের আবাস বলে বোধহয় কিছুই নেই সেটা এই ফুটপাথই, কালিঝুলি মাখা মলিন চেহারা, কে জানে সকালে ওদের পেটে কিছু পড়েছে নাকি?? কিন্তু কি সুখেই ওরা একে অপরকে জড়িয়ে একটা শালের তলায় বসে আছে; ছেলেটা দুগাল হেসে মেয়েটার জটপাকানো চুলের থেকে উকুন বেচে দিচ্ছে....

একটা পরম প্রেমের উষ্ণতায় বিপিনের সারা শরীর দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।

 

 

মস্তান                     

ডাব্বু, কালো গণেশ, মনসুর, নিহার, আরিফ, বুড়ো --- হ্যাঁ এগুলো কিছু ছেলেদের নাম, ওদের কাজ সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা মাঠের একটি স্থানে বসে গুলতানি মারা, না সর্বসমক্ষে মদ্যপান করতে দেখা না গেলেও ওরা ধূমপানটা যত্রতত্র করেই থাকে। তবে একসাথে ওরা বসলে বাংলা মদই খেয়ে থাকে, কালেভদ্রে বিদেশী স্বাদ জুটে যায় কখনো কখনো।

 কর্মের কোন ঠিকঠিকানা নাই যখন যেমন তখন তেমন মালের কারবার করে থাকে, মাছ বিক্রি, সবজি বিক্রি, মুরগি কাটা, শুধু আলু বিক্রিও করে থাকে, তবে আজকাল ওদের কয়েকজন বাসের ড্রাইভারিও  করছে, তবে সবই টেম্পোরারি...। কেবল কাজ যখন থাকে না তখন ওদের মাতৃভাষায় বিশুদ্ধ গালাগালির অগ্নিবর্ষণ শুনতে পাওয়া যায়। আসলে রাস্তার ধারে বাড়ি হলে যা হয়!!

 ইদানীং ওদের মধ্যে দুজন কমদামে কলকাতা থেকে বাইক কিনে এনেছে, একে তো সেকেন্ড হ্যান্ড তার উপর সাইলেন্সসার লাগানো নেই। ফলে নিত্যদিন পাড়ার মানুষের বিদঘুটে শব্দে  কান পাতা দায় হয়ে পড়েছে। আজ্ঞে ওরা বাইক

চালানো অভ্যাস করছে, ওদের আটকায় কে? সকলেরই তো প্রাণের মায়া আছে...।

তবে কিছুদিন হলো ওরা কথা বললে শুনছে,বাইক নিয়ে উদাম হওয়ার অভ্যাস কমিয়েছে, সবাই-ই  তো মানুষ হতে চায়।

 এই পাড়াই ছেলে কমলেশ ও পড়াশুনা করছে কলেজে পাড়ায় ভালো ছেলে বলে বেশ নামডাক এমনকি পাড়ার বাইরেও। বাড়িতে প্রয়োজন হলে দোকানে একটু-আধটু মুদিসদাই কিনতে যায়, ওরা ওকে দেখলে তেমন কিছু বলে বরং হেসে মাঝে মাঝে 'দাদা দাদাকরে কথাও বলে। কমলেশের ওদের সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই বদলে যায় ; হয়তো পেটে বিদ্যে নেই কিন্তু মানুষকে সন্মান দিতে জানে ----

 

আজ বড়দিন, কমলেশ ময়দা আর চিনি আনতে বাড়ির কাছেই দোকানে গেল,গিয়ে  দেখলো সেখানে ওই ছেলে গুলো চাল, মশলা, তেল, পাঁপড় এসব কিনছে, হয়তো পিকনিক করবে তাই। কমলেশকে দেখতেই ওরা ওকে জায়গা করে দিলো, বললো: 'হ্যাপি ক্রিসমাস দাদা'---

ও ভাবতে পারেনি ওরা এমনটাও বলবে, ওও হাসি মুখে প্রতিঅভিনন্দন বিনিময় করলো....।

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন