=========================
আদ্যানদী
সকালবেলায় মায়ের হাতের এক গ্লাস জল
খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই
আমার শরীরে নদী বইতে শুরু করে।
যে-নদীর কূল নেই---- কিনারা নেই।
আমার মন নৌকো হয়ে যায়---- যার হাল নেই----
পাল নেই---- সেঁউতি নেই।
কোথায় যাব ----কোথায় যাব না,
দূর থেকে দেখব না কাছে গিয়ে বসব----
মা সব বলে দেয়।
বাজুবন্ধে চিমটি কেটে আরও বলে দেয়
মাঝপথে খেয়ে নিস বেলপোড়া শরবৎ।
নৌকো চলতে শুরু করে
নদীর জল থেকে খসে পড়ে জলের খোলস
শঙ্খচিল ঘুরপাক খায় কানের দুপাশে
পশ্চিমা হাওয়ায় বোধ ও বোধির পাল্লা খুলে যায়
নৌকো জলে---নৌকো চলে---
সূর্যের কিরণমালা আগুনকথা বলে জলকেলি শেষ করে চলে যায় মেঘেদের বাড়ি
বেলা পড়ে এলে ঘরে ফিরে আসি
ঝিনুক ডালা নিয়ে।
দেখি , মা ভাত নিয়ে বসে আছে ;
গাছের সবুজ কাঁচা লঙ্কা , আধফালি পিঁয়াজ
দাঁড়কে মাছের টক।
দু'একটা ডিঙিলি মুখ বাড়ায়
মায়ের খুশির মতন।
কবি
কবির চিন্তা পাঁকের মাছ
পলুইমুখ পূর্ণ চাঁদ
হাত ঢোকালে জিয়লকাঁটা
আঙুলহারা ঢাকের কাঠি
কবির মন পোয়াতি নারী
ধাত্রী বসে নাছদুয়ারে
গামলা জল গরম ভারী
বাঁশের ছিলা ডুবিয়ে নাক
কবির খিদে উনুন জানে
বজ্রপাতে ফোস্কা গেরো
পিত্তথলি চলনবিল
শব্দকূটে ইঁদুর-দৌড়
কবিত্ব
চোখের সরণে দৃশ্য-রচন বুদ্ধিনাশ।
অমল ধবল পালেতে উড়ুক কল্পহাঁস।।
উদরপূর্তি শতব্যঞ্জন পুষ্টিহীন।
শব্দপ্রাচীর উল্লম্ফনে প্রমাণ দীন।।
শ্রমের অউম্ দিব্যশক্তি আত্মক্ষীর।
মহামুণ্ডের কৃষ্ণগহ্বরে প্রেরিত তির।।
সোনার গৌর কণ্ঠ জহুর শিল্পীলোক।
স্থবির জাতক গরিব কবির ফুটুক চোখ।।
আত্মনিধি
আত্মা পুড়িয়েছি যৌবনধাপায়।তবুও
আত্মপরিচয় খুঁজি নিরন্তর
কোপাইয়ের ঘুঙুরজলে।
কখন পায়ে ঠেকে আত্মার অস্থি....
পশ্চিম পাড়ে শুভ্র দুটি বক শিকার ভুলে
আমার কৌতুক দেখে।
আচ্ছা আত্মার কি অস্থিটস্থি হয়?
যা ঠাকুরদাদার কোলমগায় তুলে রাখলে
নাম-ধাম-সাকিন সহ আত্ম জেগে থাকে।
আত্মাই আত্ম কিনা জানি না। শুধু
জানি , আত্মা অবিনাশী অনুভূতির
আর আত্ম ভাঙা আয়না।
আত্মক্ষরণ
ফুটতে ফুটতে চাল সাদা হয়ে যায়
তার অশ্রুভার কেউ ধারণ করে না
জলের ব্যথা-যন্ত্রণা সবই ঢেউয়ে মিশে থাকে
বেলাভূমি তার কোনও খবর রাখে না
জলের মতো স্পষ্ট এ চরাচরে কিছু নেই
জলের আতস কাচে অতসী দেখা যায় না
সব পালাবদলের সাক্ষী ওই বুড়ো বটগাছ
কোনদিন কোনও কূট মন্তব্য করে না
বন্ধু
ডাকনামে ডাকার অধিকার শুধু সেই বন্ধুকেই দেওয়া যায়, যে খাপে ঢাকা তলোয়ার রাখে না; বাবুই পাখির বাসা নিয়ে ঘোরে।
শুধু সেই বন্ধুকেই ড্রপ করার জন্য পোস্টকার্ডটি অনায়াসে তুলে দেওয়া যায়, যে চাঁদের ঠিকানায় কেন চিঠি লিখছি, জানতে চাইবে না কোনদিনও।
সেই বন্ধুর হাতেই বুকের পাঁজর খুলে রাখা যায়, যে প্রতিটি হাড়ে দধীচীর শক্তি পরিমাপ করে, দ্বিধাহীনভাবে জানিয়ে দেয় পরবর্তী পদক্ষেপ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন