অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে অণুগল্পে সন্তোষ কুমার ভৌমিক

 


 অন্যমনে অণুগল্পে সন্তোষ কুমার ভৌমিক

===============================

চাকা


স্ত্রীর শেষ সম্বল গলার চিকটা বিক্রি করে মেয়ের মেডিকেল ফোর্থ ইয়ারের ফরম পূরন করার পর মাত্র দুই হাজার টাকা হাতে ছিল। কলেজ থেকে বের হতে একটা ফোন আসলো, "স্যার আপনার কি সময় হবে,একটু কথা বলবো?"

অনেকদিন পর সুরেলা কন্ঠে স্যার শব্দটা শুনে মেয়েটার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে না পেরে দোলনবাবু বললেন "ঠিক আছে বলুন।"

একবছর আগেও পঞ্চাশ বছর বয়সী দোলনবাবু একটা বড় পোষ্টে চাকরি করতেন।চাকরির সুবাধে সোসাইটির হোমড়া চোমড়ার সাথে উঠবস থাকলেও নেশা তো দুরে থাক কখনও সিগারেট খেতে কেউ দেখেনি।সহজ,সরল দোলনবাবু চেষ্টা করতো মানুষের জন্য কিছু একটা করতে।অমিতব্যয়ী দোলনবাবু

রোটারি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেকগুলো মানবিক ও সামাজিক প্রতিষ্টানের সাথে এখনও জড়িত আছেন।

একটা কথা প্রচলন আছে যে, একটা ক্রেডিট কার্ড রাখা মানে একজন বৌ চালানোর সমান।আমেরিকার প্রতিটি লোক নাকি গড়ে দশটা করে ক্রেডিট কার্ড রাখেন। উচ্চ মাইনের দোলনবাবু একডিগ্রি এগিয়ে বারটা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে চলেন। চিন্তা করুন, তেরটা বউকে সাথে নিয়ে সমাজ সেবা করা চারটি খানি কথা?

মাস শেষে সব কার্ডের বিল পরিশোধ করে মাঝে মাঝে ধার করে চলতে হত।

হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত কিছু কলিগের ষড়যন্ত্রে চাকরি হারিয়ে অনেকটা দিশেহারা অবস্হা।

তবে ভেঙ্গে না পড়ে বিগত একবছর পুরো চক্র এবং প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে একাই লড়াই করে চলছে।

আয় না করে বসে বসে খেলে নাকি একদিন রাজার রাজত্বও শেষ হয়ে যায়।মানসিক চাপে "মরার উপর খাঁড়ার গা" এর মত হঠাৎ এক্সিডেন্ট করে চার মাস শয্যাশায়ী হলেন।

কার্ডের বিল পেমেন্টের জন্য টেলিফোনে বিভিন্ন ব্যাংক প্রায় বিরক্ত করতে লাগলো। তাই অচেনা নাম্বারের ফোন আসলে দোলনবাবু অনেকটা অজানা শংকায় আতংকিত থাকেন।একদিন তো একজন বলেই বসলো," টাকা না থাকলে রক্ত বিক্রি করে কার্ডের দেনা শোধ করেন।"

এমন আর্থিক দুর্দশাপন্ন অবস্হা দেখে দুধের মাছির মত সব বন্ধুরা একসময় হারিয়ে গেল।

"স্যার, আমরা মানুষের জন্য করি, মানবিক সংগঠন থেকে আপনার সাথে কথা বলছি।" মেয়েটা বললো।

একদিন যেখানে দোলনবাবু মানুষকে মানবিক সাহায্য করেছে আজ হয়তো তার প্রতিদান স্বরুপ কোন সংগঠন তাকে সাহায্য দেওয়ার জন্য ফোন করছে।একটু ইতস্তত হলেও মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়ে দোলনবাবু বললেন," তো কেন ফোন করছেন বলুন।"

"স্যার আপনি তো অনেক লোক এবং সংগঠনকে প্রচুর সহযোগীতা করেছেন এখন যদি আমাদের সংগঠনকে করোনাকালীন একটু সহযোগীতা করেন।"মেয়েটির কথায় মনে হলো কেউ যেন ফুটন্ত সীসা দোলনবাবুর কানে ঢেলে দিল।মনে মনে ভাবলো, এমন অভাবে দুর্ভাগ্যের চাকা বুঝি আর থামল না।

তবু প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে আমতা আমতা করে বললেন, "ঠিক আছে,আপনাদের সংগঠনের ব্যাংক একাউন্টটা ম্যাসেজ করুন।"



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন