সেশনজট দিয়ে মাস্টার্স পাশ করতে জীবনের পঁচিশ বছর নেই। চাকরি খুঁজতে আরো দুই বছর চলে গেছে। তারপর যে জব পেয়েছি তিন বছর গেছে ঘর করতে। এখন আরো দুটো বছর কাজ করে হাতে কিছু ক্যাশ টাকা না করতে পারলে বিয়ে করি কী করে!
এখন গ্রামে আমার চেয়ে ১৫ বছর ছোট তারও বিয়ে শেষ। এমনকি ১০ বছরের ছোট অনেকেরই দু থেকে তিনটি বাচ্চাও হয়ে গেছে। মা তাদের সাথে আমার তুলনা দেয়, বিয়ে করি না কেন! আমার বয়সী কেউ বাদ নেই এমনকি আমার চেয়ে এক যুগ ছোট তাদের বিয়েও শেষের পথে। বিষয়টি যখন ভাবি নিজেরও খারাপ লাগে। একাকিত্ব তো লাগেও। বিষণ্নও লাগে। মাকে বলি, মা আমার চেয়ে ১০-১২ বছরের ছোট যারা সংসার করছে তাদের সাথে আমার চেহারার তুলনা করো তো, দেখো তো কার বয়স বেশি লাগছে? তারা ভোর হলে কি কাজ করতে যায়, তোমার ছেলে কোথায় যায় কর্ম করতে? মা, দশ বছর পর ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না, বুড়োদের তালিতায় চলে যাবে। ওদের বাচ্চা বড় না হতেই আবার বিয়ে করবে। ওদের ও ধারা চলতেই থাকবে। আমার বিষয় ভিন্ন। আমার ত্যাগ করতে হবে, সহ্য করতে হবে, ধৈর্য ধরতেই হবে। মানুষ বংশ পরম্পরায় উপরে উঠে। এক জন্ম তাই ত্যাগ করতেই হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে যেন কষ্ট করতে না হয়, একটা স্টেজে উঠিয়ে দিতেই হবে, তার জন্য ভুল করলে হবে না। ওরা আমার ১৫ বছর আগে থেকে ইনকাম করছে, আমি তাদের ১৫ বছর পর থেকে ইনকাম করা শুরু করেছি। আমি মাটি কামড়ে বড় হচ্ছি, মা।
মায়ের বয়স হয়েছে। বুঝলেও বুঝতে চাই না। মানুষ আপাতত সুখে বিশ্বাসী। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিতেও অভ্যস্থ। আর তাই বংশ পরম্পরায় মাটির সাথে মিশে থাকে। উঠতে পারে না। লাইনে চললে মানুষ তো টেনে ধরেই, আপন মানুষও টেনে ধরে। আর তাই রানশূন্য থেকে যায় জীবনের ক্রিজ।
বাটপার
নিচ থেকে নাম ধরে কেউ একজন ডাক দিলেন। জানালা দিয়ে চেয়ে দেখি বেশ বয়স্ক একজন মানুষ। কিন্তু আমি তাঁকে চিনি না, বিস্মিত হলাম আমার নাম জানলো কি করে! বললাম, কিছু বলবেন?
এখন গ্রামে আমার চেয়ে ১৫ বছর ছোট তারও বিয়ে শেষ। এমনকি ১০ বছরের ছোট অনেকেরই দু থেকে তিনটি বাচ্চাও হয়ে গেছে। মা তাদের সাথে আমার তুলনা দেয়, বিয়ে করি না কেন! আমার বয়সী কেউ বাদ নেই এমনকি আমার চেয়ে এক যুগ ছোট তাদের বিয়েও শেষের পথে। বিষয়টি যখন ভাবি নিজেরও খারাপ লাগে। একাকিত্ব তো লাগেও। বিষণ্নও লাগে। মাকে বলি, মা আমার চেয়ে ১০-১২ বছরের ছোট যারা সংসার করছে তাদের সাথে আমার চেহারার তুলনা করো তো, দেখো তো কার বয়স বেশি লাগছে? তারা ভোর হলে কি কাজ করতে যায়, তোমার ছেলে কোথায় যায় কর্ম করতে? মা, দশ বছর পর ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না, বুড়োদের তালিতায় চলে যাবে। ওদের বাচ্চা বড় না হতেই আবার বিয়ে করবে। ওদের ও ধারা চলতেই থাকবে। আমার বিষয় ভিন্ন। আমার ত্যাগ করতে হবে, সহ্য করতে হবে, ধৈর্য ধরতেই হবে। মানুষ বংশ পরম্পরায় উপরে উঠে। এক জন্ম তাই ত্যাগ করতেই হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে যেন কষ্ট করতে না হয়, একটা স্টেজে উঠিয়ে দিতেই হবে, তার জন্য ভুল করলে হবে না। ওরা আমার ১৫ বছর আগে থেকে ইনকাম করছে, আমি তাদের ১৫ বছর পর থেকে ইনকাম করা শুরু করেছি। আমি মাটি কামড়ে বড় হচ্ছি, মা।
মায়ের বয়স হয়েছে। বুঝলেও বুঝতে চাই না। মানুষ আপাতত সুখে বিশ্বাসী। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিতেও অভ্যস্থ। আর তাই বংশ পরম্পরায় মাটির সাথে মিশে থাকে। উঠতে পারে না। লাইনে চললে মানুষ তো টেনে ধরেই, আপন মানুষও টেনে ধরে। আর তাই রানশূন্য থেকে যায় জীবনের ক্রিজ।
বাটপার
নিচ থেকে নাম ধরে কেউ একজন ডাক দিলেন। জানালা দিয়ে চেয়ে দেখি বেশ বয়স্ক একজন মানুষ। কিন্তু আমি তাঁকে চিনি না, বিস্মিত হলাম আমার নাম জানলো কি করে! বললাম, কিছু বলবেন?
কচ্ছপের নাম শুনতেই অতীত মনে পড়ে গেলো। কত আগে একটা কচ্ছপ খেয়েছিলাম!
নিচে নেমে লোকটির কাছে গেলাম। বললাম, তো আপনার হাত খালি! কচ্ছপ কই?
বললেন, নেবেন কিনা জানতে এলাম আগে। আপনি চারশত টাকা দেন। আর একটা ছালার বস্তা দেন।
চারশত টাকা হাতে দিতেই লোকটি দ্রুত চলে যাচ্ছেন। বললাম, বস্তা নেবেন না?
বললেন, লাগবে না। যাবো আর আসবো।
বললাম, দাঁড়ান।
আরো পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললাম, দ্রুত যাবেন দ্রুত আসবেন।
ঘরে এসে বৌকে জল গরম করতে বললাম। গরম জলে কচ্ছপ ছেড়ে আগে মেরে নিতে হবে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল এলো, এলেন না বয়স্ক লোকটি। পেলাম না কচ্ছপটিও।
সম্মান
নানা কারণে বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়। শীতের রাত। নয়-দশটা বাজতেই এলাকা সুনশান হয়ে পড়ে। রাস্তা ঘাটে রিক্সা চলাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাসায় ফিরতে বেশ ভোগান্তি পেতে হয়।
একদিন বাসায় ফিরতে রাত বারোটা বেজে গেলো। কোন রিক্সা নেই। যদিও একটা রিক্সা পেলাম কিন্তু আমার বাসা অভিমুখে আসবে না। নির্জন রাস্তা বলে। জোরাজুরি করলাম তবুও রিক্সাওয়ালা রাজি হলো না। পাশ থেকে দু চারজন বললো, স্যারকে নিয়ে যা। সম্মানি মানুষ। স্যারকে সাহায্যটুকু করবি না?
পাশের মানুষের পীড়াপীড়িতে রিক্সাওয়ালা রাজি হলো আমাকে পৌঁছে দিতে। রিক্সাতে উঠলাম। রিক্সাওয়ালা বললো, স্যার, আপনি হয়ত আমার উপর রাগ করেছেন। কিন্তু এপথে ভয়ে আসতে চাই না। মাঝে মাঝে ছিনতাই হয়। আমার রিক্সাটায় সম্বল।
আমি বললাম, তোমার সমস্যাটা আমি বুঝতে পেরেছি। আসলে রাতে রিক্সা চালানো রিস্কেরই। ভয়েরও।
কিছু দুর যেতেই মাফলারে মুখ আটা এক লোক লাফ মেরে রিক্সায় উঠলো, ছুরি বের করলো আর বললো, মোবাইল, মানিব্যাগ দে।
ছিনতাইকারীর কবলে পড়তেই রিক্সাওয়ালা রিক্সা ফেলে দৌঁড় দিলো। আমি মানিব্যাগ আর মোবাইল দিতে এক সেকেন্ডও ব্যয় না করে রাজি হয়ে গেলাম। মানিব্যাগ বের করতেই ছিনতাইকারী রিক্সা থেকে নেমে দৌঁড় দিলো। তার শেষের একটি কথা শুনতে পেলাম, আঁ ছি! স্যার যে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন