অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে অণুগল্পে যুথিকা সাহা


অন্যমনে অণুগল্পে যুথিকা সাহা
======================



আলোর ঠিকানা

সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল একজন সুন্দরী মহিলা । ভোরের আলো ফোটার আগেই ঠান্ডা বাতাসে বেড়াতে বেরোনো, সাথে অন্য একজন মহিলা একটি মেয়ে। বেশ সম্ভ্রান্ত ঘরের বলেই তো মনে হচ্ছে ,দূর থেকে একদৃষ্টে চেয়ে দেখেছিল সুকান্ত ।

না এবার তাহলে সুকান্তের মনের কথাগুলো বলেই ফেলা যাক ------হাজার প্রশ্নের ভিড় তার মনে উঁকি দিচ্ছে কারন যাকে দেখছে তাকে অনেক চেনা মনে হচ্ছে ।এই বয়সে এসে কেমন ঘাবড়ে যাচ্ছে ।হ্যাঁ যাওয়ার কথা মানে যাকে দেখতে পেল সে কি সেইই সঞ্চিতা !

মনে মনে ভাবনা আসতেই পারে ----ধুর ও একটা সেই মফস্বল শহরের মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিল !একসময় সুকান্তের সাথে বেশ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । কিন্তু দু থেকে আড়াই বছর তারা কতটা এগিয়েছিল সত্যি তা প্রায় সকলেই জানতো। এমনকি সঞ্চিতার বাড়িতে বলতে গেলে দু'একজন ছাড়া সবাই। সকলেই ভেবেছিল বিঁয়েটা সঞ্চিতার এখানেই পাকা। কিন্তু না কেমন যেন সুকান্ত পিছনে সরে যেতে লাগলো।

আশির দশকের কথা আজ এই ভোরের সূর্যোদয় দেখবে বলে এসে এসব মনে হচ্ছে ওই মহিলা কে দেখে!

মনের দরজায় কড়া নাড়ছে কে ?

সব স্মৃতিগুলোকে কি মোছা যায় ,চেষ্টা করেছিল সে মুছতে কিন্তু আজ ,একি,,, ,,,,,,

হ্যাঁ ঠিক সেটাই কোন ভুল নয় ,ভুল হতে পারে না কারন একদিন তার গন্ধটাও যে চেনা ছিল ।

তবে তার ভালোবাসাটা নিছক খেয়ালের ! সঞ্চিতা সে তো মন থেকেই চাইতো , ওদের দুজনকে কলেজে দেখা গেছে একাধিক বার।

সবার মুখে একটা কথা ছিল না দারুণ জুটি কারন সঞ্চিতা বেশ সুন্দর আর সুকান্তকে দেখতেও মন্দ নয়। দুজনের বন্ধুদের ও জানা ছিল ওদের এক্কেবারে পাকা ।কখন এই দক্ষিণা বাতাস ঝড় হয়ে উঠে সব ওলটপালট করে দিল !

হুঁ হয়তো ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন ----এই মনোমালিন্যের বেশ কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্চিতার বিঁয়ে ঠিক হয়ে গেল ।এ সম্পর্ক ঝড়ের বেগে হলেও তা শান্তির বার্তা নিয়ে এলো । সত্যি !!!!!

অবস্থাপন্ন ভীষণ ভালো এক পরিবারে তার বিঁয়ে হয়ে যায়।

কেউ এটা ভাবতেই পারেনি ! সঞ্চিতাকে দেখে একচোখে পছন্দ হয়ে যাওয়ারই কথা,সেখানে যার মনে ইচ্ছে থাকবে সে ওই মধ্যবিত্ত নামের সেন্টিমেন্ট নিয়ে মাতামাতি না করে তার পছন্দকেই সবার আগে প্রাধান্য দেবে এবং দিয়েছিল।তাই তো সঞ্চিতা আজ কোথায় আছে ,সে খবর অনেকেই জানে আবার হয়তো এতটা কেউ ভাবতেই পারেনা !

কারন তার পরিচয়টাও আজ অন্যরকম ,স্বামী ইনন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট তার খ্যাতিও আছে।

সুকান্ত তো পুরোটা জানেনা আর শুনেও নাকি বিশ্বাস করতে চায়নি !

সে সব কথা সঞ্চিতা খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে জেনেছে।তবে সঞ্চিতা মনের ভেতর থেকে উপরে ফেলে দিয়েছে ,কারন এখন ওর প্রতি শুধুই ঘৃণা ।

একদিন অনেক কথাই শুনতে হয়েছিল সুকান্তের মুখে সে উত্তর দিতে পারেনি লজ্জায় মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছিল যে তার ।

তখন ওদের প্রেম বেশ জমে উঠেছে বেশ অনেক দিন হয়েও গেছে তাই পড়াশোনার ফাঁকে ঘোরা বেড়ানো।এরই মধ্যে কথায় কথায় সুকান্ত বলে উঠলো ,দেখ বাড়িতে বাবা আমার বিঁয়ের কথা বলছে কি যে করি।

সঞ্চিতা তখন বলেছিল তোমার বাড়িতে বললে মা জানে আর বাবা কি ,,,,

বলতেই কথাটা কেড়ে নিয়ে বললো ,হ্যাঁ বাবাকে কে বলেছে আমাদের কথা তাই বাবা বিঁয়ে দেবে বলে উঠেপড়ে লেগেছে ।

সেকি তুমি বলোনি বাবাকে ?

ওরে বাব্বা !!! বাবাকে বলতে যাওয়া মানেই তো ,,,,

কি হয়েছে ?

না কিছু না আসলে বাবাকে তোমার বাড়ির সম্বন্ধে সব জানিয়েছে সত্যি কথা ।

কি কথা বলো তো ?

দেখ কিছু মনে কোরোনা আমাদের বাড়ির অবস্থাটা তুমি জানো আর বাবার কত বড় ব্যবসা । এখন থেকেই আমাকে সামলাতে হয় বিশেষ করে বাইরের কাজ গুলো দিল্লী ,গুজরাট , আমেদাবাদ । আমাদের ফ্যামিলির একটা নাম আছে তোমাদের সে দিক থেকে বলতে গেলে তো ,,,,,,,

সঞ্চিতা অমনি বলেই ফেলো না যা বলতে চাও অত হেজিটেশন করছো কেন ?

না ঠিক তা নয় তবে দেখ তোমার বাড়ির যা অবস্থা আমাদের সাথে ঠিক মিলছে না আর বিঁয়েতে তেমন কিছু দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না ।তুমিই বল একজন ভদ্রমানুষ তোমাদের বাড়ি গেলে কোথায় বসতে দেবে ?

কিছুই তো নেই তোমাদের এখন দেখছি ,তাছাড়া লোক -লৌকিকতা বলে একটা ব্যাপার আছে বল? অনেক ভেবে দেখলাম যে ব্যবসাটা তো বাবার তাই কি করে অবাধ্য হই আর বাবার দিক থেকেও ঠিকই বলছে । আমাদের আত্মীয়-স্বজন পরিবারের একটা স্ট্যাটাস আছে! বাবা এর মধ্যেই তোমাদের সব খোঁজ খবর নিয়ে ফেলেছে সেটা আমিও জানিনা বুঝলে ।ওই যে সবাই পিকনিকে গেছিলাম তখন থেকেই বাবা জেনেছে ।

একটানা এতগুলো কথা সুকান্তের মুখে শুনে সঞ্চিতার কেমন পায়ের তলার মাটি সরে গেল !!

বুকের মধ্যে কান্না গুলোকে কেমন পাথর চাপা দিতে লাগল আর চুপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ কারন ভালোবাসা এখন আর হৃদয়ে নেই,সে প্রাচুর্যের হাত ধরে চলে সেখানেই তার মিলন---এটা তো তার এই এত অল্প বয়সে বুঝে ওঠা হয় নি।তাই যেন বজ্রপাতের মতো সে ভেঙ্গে পড়লো কিন্ত সুকান্তকে বুঝতে না দিয়ে অনেক কষ্টে সব কথার ব্যথা সহ্য করে নীরবে চলে এসেছিল।

সুকান্তের হৃদয়েই আদৌ ভালোবাসা ছিল না সেটা এখন বুঝতে পারছে সে ,হয়তো অনেক বড় বিপত্তি হতে পারতো! ভালোবাসায় কি না হয় সেখানে কখন যে মন দেওয়া -নেওয়া হয়ে যায় কেউ বলতে পারে !

তাছাড়া দু'জন ছিল দু'জনের হৃদয়ের ভীষণ কাছে । না তা হয়নি ঈশ্বরই হয়তো হতে দিলেন না কারন সুকান্তর এই ছোট মনের কাছে নিষ্পাপ সুন্দর পবিত্র মনটাকে কলুষিত করতে দিলেন না মেয়েটা এ যাত্রা এক রকম বেঁচে গেল ।

কিন্তু মনতো মানেনা তাই তাকে সামলানো অত সহজ ! ভালোবাসার আগুন পাখিটা এভাবেই ধিকিধিকি জ্বলে পুড়ে শেষ হতে লাগলো আর বেশ ভেঙ্গেই পড়েছিল সেইই উনিশের যৌবনা উচ্ছ্বল মেয়েটা । এভাবেই এক নিমেষেই ভেঙ্গে গেছিল তিলতিল করে জমানো ভালোবাসাটা আশির দশকের শেষে ।







সুকান্ত দাঁড়িয়ে ছিল তার মেয়ের হাত ধরে সমুদ্রতটে। দূরে সোনালী বালিয়ারী দেখা যেতেই মেয়ে অনেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে লাগলো ?

বিশেষ করে তার চোখেও ঐ সুন্দর দেখতে আন্টিকে দেখেছিল তাই বাবার সাথে পায়ে পায়ে চলতেই দেখতে পেলো দূরে ওইই সোনালী বালিয়ারীর দিকে বেশ কিছু মানুষের ভিড় আর বড় ক্যামেরা !

সুকান্ত কেমন চমকে উঠে মেয়েকে বললো ,কার সাথে কথা বলছিস?

মেয়ে তো হেসেই কুটিপাটি সে ও অমনি বলে উঠলো ,তুমিও কি ওই দিকে দেখছো ওই যে গো যে সুন্দর আন্টিটা এখান দিয়ে গেল আর ওই বালিয়ারীর সামনে দেখো ওনাকে দেখতে কেমন মানুষের ভিড় !

বেশ কিছু মানুষ ছুটে যেতে যেতে বলছিল সিনেমার শুটিং হচ্ছে কাল দেখেছিলাম আজো হচ্ছে তাড়াতাড়ি চলো।

হ্যাঁ সঞ্চিতা এখন নায়িকা সিনেমা করছে বেশ কিছুদিন থেকেই এসব খবরের বাইরে সুকান্ত ।কত কিছু হয়ে যাচ্ছে সে খবর রাখে না ,ওসব বিলাসিতা ও তার নেই কেমন আদ্যিকালের মানুষ ।এখন সেইরকম দেখতেও নেই আর মানষিক দিক থেকেও কেমন ভেঙ্গে পড়েছে । আগের মতো অবস্থা নেই বললেই চলে ওই সাদামাটা সংসার জীবন।সে জীবনের সাথে সঞ্চিতার স্বাধীনচেতা জীবনের আকাশ -পাতাল ফারাক!

একদিন মিথ্যে দম্ভ আর অহংকার যে হদয়ের সত্য ভালোবাসাকে ভেঙ্গেচুরেখান খান করে দিয়েছিল হয়তো তার পরিণতি বলা যায়।

সঞ্চিতা মুখে না বললেও তার চোখের জলের ফোঁটা সব হিসেব রেখেছিল বোধহয়। ঈশ্বরের হৃদয়ে যা পৌঁছেছিল কখনো সেকি জানতে পেরেছিল ?

ভালোবাসাই তো পারে জীবনকে মুক্তি দিতে ,তার ওপর যে অগাধ বিশ্বাস ছিল আর এই সত্য বিশ্বাসের ফলস্বরূপ তার জীবন বদলে গেল ,কাছে পেলো তাকে যে উজাড় করে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছে সে তার স্বামী মহৎ মনের মানুষ।

অবহেলা বা অবজ্ঞা কোন কিছুই তাকে ছুঁতে পারেনি বরং সে আজ উচ্চাসনে আসীন। তাই তো নতুন আলোর দিশারী হয়েই সুন্দর জীবনের পথ খুঁজে পেয়েছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন