অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে অণুগল্পে পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)

 

 অন্যমনে অণুগল্পে পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)

====================================



শয়তান

কাজের বাড়িতে মুম্বাই থেকে বৌদি এসেছে। মুম্বাইতে কাজের লোকের অভাব তাই মুন্নিকে নিয়ে যাবে বলেছে মোটা মাইনেতে। বৌদি কথা দিয়েছে মুন্নিকে খুব যত্নেই রাখবে।

তুই মেনে নিলি বৌ? মেয়ে ছাড়া কষ্ট হবে না তুর?



হবে ,কিন্তু ভাব দেখি মুন্নি রোজগার করলে মা তোর চিকিৎসার খরচ আসবে। তুই আমি মিলে সংসারটা চালাতে পাচ্ছি কই বল দেখি!

সাত মাস পরে, মাসি খবরের কাগজে মুন্নির ছবি, কারা মুন্নিকে ভোগ করে জলে ভাসিয়েছে!



কি বলছিস? এই সেদিন মুন্নি ফোন করে জানালো ভালো আছে। বাড়ি আসতে পাচ্ছেনা বলে মন খারাপ, জানুয়ারি মাসে মেয়েটাকে উহারা নিয়ে গেল মার্চ মাস থেকে লকডাউন ট্রেন বন্ধ আসতে পারল না। কিন্তু বৌদি তো যত্ন করে মুন্নিকে রেখেছিল। তাহলে আমার এত্তো বড়ো সর্বনাশ হলো কিভাবে?



বৌ ফোন এসেছে বৌদির ধর দেখি, আমাদের সর্বনাশের খবর খানা নে ভালো করে।



মুম্বাই যাওয়ার পর থেকেই মুন্নি বৌদির কাজ করে । বৌদি মুন্নিকে যত্নেই রেখেছিল। বাজার করার দায়িত্ব বৌদি মুন্নিকেই দিয়ে রাখে। উনিশ বছরেই পাকা হাতে বাজার করতো মুন্নি। বাজারের পথে রসিম চাচার সাথে আলাপ। এরই মধ্যে লকডাউনের খবর।

কিছুদিনের মধ্যেই মায়ের ফোন বাবার সামান্য আয়ের কাজটুকুও চলে গেছে। বাবার চিকিৎসার খরচ সংসার চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না একা মায়ের পক্ষে। রসিম চাচা বাবার মতো, সমস্যার কথা সব খুলে বলল মুন্নি। আরে কিউ ইতনা সোচ রাহিহো বেটি, হ্যাম হ্যাঁয় না।



কিছুদিন পরে রসিম চাচা বললো,"এক কাম তেরে লিয়ে মিলা হ্যায় বেটি। আভি লকডাউন ছুপকে আনা পড়েগা। ইসলিয়ে অন্ধেরা হোনে পর এঁহা আনা।"



অন্য জায়গায় কাজ শুনে বৌদি প্রথমে আপত্তি করলেও সব ভেবে রাজি হলো শেষে।



সব কাজ সেরে বৌদির বাড়ি থেকে বেরুলো মুন্নি। বিশ্বাসের সাথে রসিম চাচার হাত ধরে নতুন কাজের জায়গায় পৌঁছালো।



একি এখানে এরা কারা? কিছু ভাবার আগেই চার পাঁচটা ছেলে মুন্নিকে ঘিরে নিল।

মুন্নি তাজ্জব হয়ে দেখলো রসিম চাচাকে ওরা টাকা দিচ্ছে আর চাচা চকচকে চোখে গুনছে। টাকাটা পকেটে রেখে রসিম চাচা কাছে এসে বলল মাফি বেটিয়া, লকডাউন মেরা কাম ছিন লিয়া । না চাহতে হুয়ে ভি তুঝে বেচনা পড়া। নেহি তো মেরে বিমার বেটেকা অপারেশন নেহি হোতা। আভি দুসরা কাম মিলতা তো...



সেই রাতে মুন্নিকে ছিঁড়ে খেল শিয়াল কুকুরের দল। শেষ প্রাণ টুকুতে গলায় ছুঁড়ি চালিয়ে জলে ভাসিয়ে দিল।



কিছুদিন পরে খবরের কাগজে আবার একটা খবর বেরালো, রসিম চাচা নিজেই স্যারেন্ডার করেছে, অপারেশনের পরে করোনাতে তার ছেলের মৃত্যুর হয়েছে ....।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন