অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

 


 অন্যমনে অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

=======================

রোদবেলা

ভট্টাচার্য পাড়ার দুর্গাপুজো দেখলেই মনে পড়ে বাল্যপ্রেম,অমিতের।কাঁসর    ঘন্টা বাজত আরতির সময়।অমিত ভালো কাঁসর বাজাত।আর তাছাড়া সীমার মুখ দেখবার লোভে ছুটে চলে যেত পুজোমন্ডপে।অমিত আরতির ফাঁকে দেখে নিত সীমার    চোখ।তার চোখের নজর অমিতের দিকেই থাকত। অমিত সারাদিন তাকিয়ে থাকত ওদের বাড়ির দিকে।যদি একবারও দেখা যায় সীমার মুখ। অসীম খিদে চোখে কেটে গেছে তার রোদবেলা।

 

আজও বাহান্ন বসন্তের পরে অমিত ভুলতে পারেনি তার অতৃপ্ত প্রথম রোদবেলার কথা...

  

বিরিঞ্চির দোকান

এই দোকানই আমাদের স্বপ্নপূরণের মাধ্যম ছিল।বন্ধুরা বনভোজন করতাম এই দোকান থেকে চাল,ডিম,মশলাপাতি কিনে। লজেন্স, চানাচুর আর শোনপাপড়ির মিশ্রিত গন্ধজুড়ে মেতে উঠত ছেলেবেলার আলাপি  বিকেল।

দশ বছর পরে  সপরিবারে দুর্গাপুজোর প্রসাদ খেতে গিয়ে বিরিঞ্চির দোকানঘরের কাছে থমকে গেলাম। মাটির ঘরের কাবারির কঙ্কাল বুকে শেলবিদ্ধ করল আমার। মর্মাহত হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,বাবা দোকানের এই হাল কেন? বাবা বললেন, সেই বিরিঞ্চিদাও নেই আর দোকানও নেই।তার ছেলেরা এই বাড়ি বিক্রি করে শহরে গেছে উন্নতির আশায়।

আমি তখনও দাদুর সঙ্গে হাত ধরে বিরিঞ্চির দোকানে যাচ্ছি ছোটবেলার স্মৃতিপথ ধরে।

 

প্রেম

বিপিন  পাড়ার  যুবক।  ছিপ নিয়ে বসে থাকে দুপুরে, জেলেবৌকে দেখার লোভে। সুন্দরী  ভোলে না, এই বসন্তমায়া ।  বর্ষা,   শীত বা গ্রীষ্ম দুজনের 'বসন্তমায়া' কেড়ে নিতে পারে না। 

আদরে  ডাগর দুপুর  জলে নেমেছে। জেলেবৌ কাপড় ঝেড়ে জলে ধুয়ে নিলো কাদা ।তারপর দুজনেই ডুবলো আকন্ঠ শীতল জলীয় আবরণে। একটা পানকৌড়ি ডুবে ডুবে জল খাওয়ার  কৌশল শেখায় দুজন কে। সাহসি সুখে  ছিপ ডাঙায় তুলে  বিপিন দেখে একটা  রুই গেঁথে আছে  বঁড়শিতে। 

 জেলেবৌ ভিজে ভিজে  ভালোলাগায় আঁচলে জড়িয়ে  নেয় বিপিনের প্রেম...

 

আয়না

বিনয় তার বাবা মাকে ছোটবেলায় হারিয়েছে।রীতা দেবিকে ছোট থেকে মা বলে জেনেছে।তিনিই তাকে বড় করেছেন। আজ কালিপুজো।সকলে মায়ের কাছে প্রার্থনা করছেন নিজের মঙ্গলের জন্য। কিন্তু বিনয় শুনলো তার মা প্রার্থনার সময় মা কালি কে বলছেন,মা তোমার নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখো।তুমি ভালো থাকলে পুরো পৃথিবী ভালো থাকবে।

বিনয় মৃণ্ময়ীর চিন্ময়ী রূপ  দেখলো নিজের মায়ের মুখমন্ডলের আয়নায়। 

  

কবর

 সুমন চালিয়ে যেত তার গোপন ইচ্ছের কলমটা। বাংলা গল্প লেখায় তার বেশ নামডাক হয়েছে। মা বলেন, লিখে সংসার চলবে না বাবু তোমার বাকি জীবন পড়ে আছে। তুই একটা চাকরি পাওয়ার চেষ্টা কর। মায়ের কথামত সুমন চাকরির চেষ্টা করে কিন্তু পায় না। শেষে একটা শাড়ির দোকানে সেলসম্যানের কাজ করে। তারপর তার বিয়ে হয়। মা খুব খুশি কিন্তু সুমনের গোপন ইচ্ছেটা  পূর্ণ হয় না। সুমন ভাবেলেখকদের আর্থিক দিকটা যদি ভাবতে না হত তাহলে হয়ত  ইচ্ছেপাখির কবর দিতে হত না

 

অশরীরী

 রমেন সকালে উঠেই ঘরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা লাশ ঝুলছে।অনেকদিন পর নিজেকে তার বেশ হাল্কা লাগছে।মনে পরে গেলো তার গত রাতের কথা।ঝুমার সঙ্গে তার ভালোবাসা অনেকদিনের। তবু সে দীপের সঙ্গে খোলাখুলি যৌনাচারে লিপ্ত। লুকিয়ে রমেন দীপের বাগানবাড়িতে সব দেখেছে। তারপর সে দুঃখে,রাগে গলায়  দড়ি নিয়েছে গতকাল।শরীরবিহীন হয়ে সে আজ মুক্ত হয়েছে পরকীয়ার আঘাত থেকে।

 

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন