অন্যমনে গুচ্ছকবিতায় দীপঙ্কর সরকার
===========================
কবিতা
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আজ কবিদের সভা ,
কবিদের জন্য
বরাদ্দ হোক মাসিক ভাতা । এ শ্লোগান ছাপিয়ে উঠে
আসে কবিরাও মানুষ কবিদের ও খিদে আছে গভীর
তেষ্টা , কবিরা শুধু কল্পনা বিলাসী নয় ' পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ' এ বাক্যবন্ধে কবিদের পেট ও
ভরে না , ভাত চায় ভাত আর একটু নুন 'খালি পেটে ধর্ম হয় না যেমন ' অভুক্ত পেটে কবিতা আসে না পদ্য
কিম্বা অধুনান্তিক গদ্যচর্চা--সকলই বৃথা যায় ; পকেটে
পয়সা না থাকলে ভালোবাসা যেমন জানালা দিয়ে
পালায় , কবিদের ও আজ এমনি অন্তিম দশা ।
প্রসাধন
রূপচর্চা ফুটে ওঠে লিপস্টিক রাঙা ঠোঁট বরাবর
মাথায় হেয়ার ব্যান সুললিত চুলের বিন্যাস দু - চোখে
সুর্মা আঁকা নখেতে নেল পালিশ মেহেন্দি মাখা হাত
যেন প্রজাপতির ডানা , টিকলো নাকে নাকছাবি
পূর্ণিমা রাতের ঠিকানা । গতরে আতর ঢালা দু-কানে
ঝুলন্ত কানপাশা ,
গলায় সাতনরী হার ইমিটেশন রাঙা।
হৃদয়ে পিপাসা প্রেমের এমনই ষোড়শী যুবতি তবু তার
চোখের জলের কোনো অনুবাদ হয় না ।
বচসা
দুপুরে টিফিন হলে খল বলিয়ে ওঠে হাসি
পারস্পরিক কথা হয় টিকা ও টিপ্পনী । ফোড়ন
কাটা স্বভাব তখন চাগাড় দিয়ে ওঠে , দুজনে
আকচা আকচি হয় । এ ওর টিফিন খুঁটে খায়
অবাধে চলে হাজারো খুনসুটি ; বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড
নিয়ে তর্ক হয় জোর , পাঠের কথা ভুলে কিছুটা
সময় কাটে পরনিন্দা পরচর্চায় আবার ও ঘণ্টা
পড়লে যে যার রুমে ফিরে যায় অনায়াস ।
অলৌকিক হাওয়া
অলৌকিক হাওয়া উড়িয়ে দিলাম পড়ল এসে
মাটির গহ্বরে , দিগন্ত অন্ধকার হল নিমেষে কাকতাড়ুয়া
প্রমাদ গুনল কোনদিকে যাবে গোবেচারা ! দিব্যি
ছিল ক্ষেতে মাঠ পাহারায় ঠাওর হয় না কিছুই , এখন
যদি সব খেয়ে নেয় মাজরা পোকা কীইবা জবাবদিহি করবে ;
জমিদারের লেঠেল যদি খোঁজ নিয়ে যায় হাড় মাংস চিবিয়ে খাবে ,
আস্ত রাখবে না । কেন যে
সে লড়তে গেল বিষম লড়াই লড়ল একা
উড়িয়ে দিল অলৌকিক সে হাওয়া !
ভাবতে গেলে বিগড়ে যায় মাথা
কোন প্রয়োজন সিদ্ধ হল কে বলবে কাকে তার
মূর্খামির কথা !
সেই সব নক্ষত্রগুলো
সেই সব নক্ষত্রগুলো আমাকে ব্যঙ্গ করছে আর
আমি সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি সাবলীল ।
আকাশের নিষেধ গ্রাহ্য করিনি বাতাস ঠেলে ঠেলে
এগিয়ে চলেছি শূন্যতার পথে দিগন্ত রেখায় একদিন
মিশে যাব ঠিক মহাজাগতিক ধূসর ছায়ায় --
এভাবেই আলোকবর্ষ জুড়ে পৃথিবী পরিক্রমা করে যাব ভ্রূক্ষেপ হীন ।
নক্ষত্ররা যতই ব্যঙ্গ করুক থোড়াই কেয়ার করি
পরিযায়ী নক্ষত্রদের সেই সব তামাম অচ্ছুত ।
প্রতিরূপ
প্রতিরূপ খুঁজে ফিরি জলজ অক্ষরে লিখি নাম
জলের কি আসে যায় ? জলের আলপনা সে তো
জলেই বিলীয়মান ।
রোদ মুখ চেয়ে থাকি কপোল জুড়ে ঘাম রোদালি
আকাশ মিটিমিটি হাসে বনবীথি সচকিত প্রাণ ।
উঠানে ঘাসফুল সোল্লাসে নাচে হাওয়া ধুয়ো দ্যায় ,
গানে গানে মুখরিত ধূলি ধূসরিত বোবা প্রাঙ্গণ ।
অলস দুপুর চেয়ে থাকে করুণ নয়ন মাঠ ঘাট পুড়ে খাক ,
প্রতিরূপ ঝুঁকে থাকে ঈষৎ আনত বয়ান ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন