অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২১

অন্যমনে গুচ্ছকবিতায় অভিষেক ঘোষ

 

 
অন্যমনে গুচ্ছকবিতায় অভিষেক ঘোষ
===========================

পদ্যের নাও

আমার পদ্যের পালে সহসা এসে লাগে

গদ্যের বাতাস ।

গলুই ভ'রে তোলে ক্ষুধাতুর মানুষের দীর্ঘশ্বাস !

নৌকা নিয়ে এগুনো কঠিন,

যেমন শামুকের ছদ্মনাম রাখা কঠিন ।


জলের ব্যবহারে নারীর ছলনা,

ছলাৎছলে ললনার বক্রগ্রীবায়

মন ভেঙে-দেওয়া দৃষ্টি । আষাঢ়ের

প্রথম দিবসে সজল বাতাসের মতো

ভারী আর অভিমানী হয়ে ওঠে আমার দু-হাত ।


রবি ঠাকুরের মতো পদ্যগুলো তুলে তুলে,

জলে ফেলে দেওয়া যেত । কিন্তু

অমরত্বের সাধনা আমাদের নয় !

ক্ষণিকের জীবন পদ্মপাতায় জল,

সূর্য-কিরণের প্রতিফলনেই -

তার বাসনা সফল ।


তাই রাখি দাঁড়ে হাত,

হৃদয়ে যেখানে যতটুকু

বেদনার যাতায়াত,

সবটুকু টেনেটুনে নিয়ে

ভারী করে তুলি নীল রাত ।


কবি আর কবিতায়, রাখিনি তফাৎ ।




ভ্রান্তি

১ ম দিন
আমায় ওরা খোলা মাঠে মুক্তি দিয়েছে ! দেখো মা, আমি মুক্ত ।
কী যে আনন্দ হচ্ছে !
আমি কখনো ভাবিনি জানো,
ওরা আমায় ওদের শাসন থেকে, শৃঙ্খল থেকে, এতখানি মুক্তি দেবে ... মা !

২ য় দিন
কত সবুজ চারিদিক ! চতুর্দিকে গা-ঘেঁষাঘেষি করার কেউ নেই ।
যেদিকে চোখ মেলছি, মুক্তজীবন হাতছানি দিচ্ছে,
আজ আর কেউ অশালীন কটাক্ষে, অবাঞ্ছিত ঘৃণ্য স্পর্শে,

বিকৃত লালসায় –
আমায় নিয়ম-মাফিক বিব্রত করতে পারবে না,
তা ভেবে কী যে ভালো লাগছে !!

৩ য় দিন

তবে কী সব্ ভুল ছিল মা ? ওদেরই একজন আজ
আমাকে আমার অজান্তেই একা করে দিয়েছে, তার নিজস্ব গোপন স্বার্থে ।
সমাজ থেকে স্বতন্ত্র করে, নিজের কামনার বিকৃত জগতে আশ্রয় দিয়েছে !
মা গো, এতটা ঠকে গেলাম আমি !
কখনো ভাবলাম না, কোনো পুরুষ পারে না এতটা মহৎ হতে,
এমন অসীম মুক্তি পুরুষের পৃথিবীতে অলীক । সব ভ্রান্তি-পাশ ।
সবার থেকে পৃথক করে, দিয়েছে উন্মুক্ত খোলা মাঠ । কিন্তু অলক্ষ্যে,
গোপন কামনার অদৃশ্য প্রাচীর তুলেছে, আমার স্বাধীন অবকাশ-টুকু ঘিরে ।
আজ অবাক হলে চোখ রাঙিয়ে সে বলছে, “এই গন্ডির মধ্যে যত পারো ছোটো,
আমি একা তোমার সব-টা চাই, পাবে না অন্য কেউ । আর প্রাচীর !
ও তো তোমার-ই নিরাপত্তার প্রয়োজনে !”
নিরাপত্তা ! হায় রে... আপন সত্তা

যেখানে বিকোল, হল প্রতারিত,
সেখানে কী হবে নিরাপত্তার এই বুদবুদ নিয়ে ?



কবি ?


গোলাপ-সুবাস, মাখন-সোহাগ,

সলাজ-উপহাস, কুসুমের দাগ,

এইসব ছোটো ছোটো অনুভূতিময়

শব্দের রেলগাড়ি ঠেলে আগুয়ান হয়,

ফেবু-কবির সংক্ষিপ্ত, আহ্লাদিত জীবন ।

কেতাবে বলে অন্তঃসারশূন্য অলীক স্বপন !

আশা, অকথিত অনাদর, অবিন্যস্ত প্রলাপের ঘোর,

অলিখিত বেদনা-চাদর ছুঁড়ে ফেলে, অপেক্ষায় ভোর !





কবির স্বপ্ন


ধড়ের উপরে অস্তিত্বের মৌচাক,

লাল মেঘে ফাঁস হয়ে লেগে থাক্ ।



কুড়োবার মতো ফুল

বিধবার এলো চুল

ছুঁয়ে বেমানান হয়ে থাক্ ।



সূর্য-কিরণ বেঁধে

পাতায় সবুজে রেঁধে

অরণ্য গোটা ক্লোরোফিল হয়ে যাক্ ।



গঙ্গায় কাদা জলে

স্রোতে ভাসবার ছলে

মাছেদের মতো স্বচ্ছ পাখনা গজাক্ ।



অবলীলাক্রমে লাল নটে শাক্,

দিশারী, লড়াকু কৃষকের পেটে যাক্ ।

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন